কলকাতা সংবাদদাতা:
খাদ্য সচিবের পর এবার স্বাস্থ্য সচিব। দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হল স্বাস্থ্য সচিব বিবেক কুমারকে। তাঁকে বদলি করা হয়েছে পরিবেশ দফতরে। অন্যদিকে, তাঁর জায়গায় আনা হয়েছে নারায়ণ স্বরূপকে। তিনি ছিলেন পরিবহণ দফতরের সচিব। এই ঘটনায় রাজ্যে বেশ শোরগোল পড়ে যায়। তবে কী কারণে, স্বাস্থ্য দফতরের সচিবের পদ থেকে বিবেক কুমারকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে, সে ব্যাপারে কোনও ব্যাখ্যা দেওয়া হয়নি রাজ্য সরকারের তরফে।
সূত্রের খবর, করোনা পরিস্থিতির মোকাবিলায় রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরের ভূমিকায় সন্তুষ্ট নন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। চিকিৎসক, নার্স এবং স্বাস্থ্যকর্মীরা করোনা চিকিৎসা করতে গিয়ে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা পাচ্ছেন না বলে একাধিকবার অভিযোগ তুলেছেন। বিষয়টি অবগত ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। তা ছাড়া কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক চিঠি পাঠিয়ে রাজ্যে করোনা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চাইলে জবাবী চিঠিতে স্বাস্থ্য সচিব সংক্রমিত ব্যক্তি ও মৃতের সংখ্যা নিয়ে যে তথ্য কেন্দ্রকে জানিয়েছিলেন, তা রাজ্যকে সন্তুষ্ট করতে পারেনি। ওই ঘটনার পরই রাজ্য সরকার করোনা সংক্রান্ত প্রকৃত তথ্য চেপে যাচ্ছে বলে বিরোধী দলগুলি অভিযোগ করতে শুরু করে। ওয়াকিবহাল মহলের ধারণা, সেইজন্যই দায়িত্ব থেকে স্বাস্থ্য সচিবকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
স্বাস্থ্য সচিবকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়ার খবর প্রকাশ্যে আসতেই সমালোচনায় মুখর হয়ে উঠেছে রাজ্যের বিরোধী দলগুলি। সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেন, ‘করোনা মোকাবিলায় রাজ্য সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগ পুরোপুরি ব্যর্থ। সেইজন্যই স্বাস্থ্য সচিবকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।’ তিনি স্পষ্ট বলেন, ‘কিন্তু সমস্ত ব্যর্থতার দায় কেন সচিবদেরই নিতে হবে? কেন দফতরের মন্ত্রীরা সেই দায়িত্ব নেবেন না?’ রাজনৈতিক মহলের ধারণা, এ কথার মধ্য দিয়ে সুজনবাবু মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেই নিশানা করেছেন। তবে সুজনবাবু এদিন আরও বলেছেন, ‘রেশন নিয়ে দুর্নীতির পর খাদ্য সচিবকে সরিয়ে দেওয়া হয়। অথচ খাদ্যমন্ত্রী বহাল তবিয়তে থেকে গিয়েছেন।’
তবে অত রাখঢাক করেননি বিজেপি নেতা তথা দলের প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি রাহুল সিনহা। তিনি বলেছেন, ‘রাজ্যের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার এই করুণ অবস্থার দায় নিতে হবে স্বাস্থ্যমন্ত্রীকেই। কেবল স্বাস্থ্য সচিবকে সরিয়ে দিয়ে দায় এড়িয়ে যাওয়া যাবে না।’ তিনি অভিযোগ করেন, ‘রাজ্যে চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের মানসিক দুরবস্থার জন্য দায়ী সরকারের নীতিই। মনোবল বাড়াতে তাঁদের পাশে দাঁড়ানো উচিত ছিল সরকারের। তা না করে রাজনীতি করতে ব্যস্ত এই সরকার।’
শুধু রাহুল সিনহাই নন, মুখ খুলেছেন বিজেপির বর্তমান রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষও। তিনি চাঁছাছোলা ভাষায় রাজ্য সরকারের সমালোচনা করে বলেছেন, ‘যে দফতর নিয়ে বিতর্ক হচ্ছে, সেই দফতরের সচিবকেই সরিয়ে দিচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী। খাদ্য, স্বাস্থ্য ও স্বরাষ্ট্র দফতর নিয়ে আগে থেকেই আমরা অভিযোগ করে আসছি। দেখা যাচ্ছে, আমাদের অভিযোগই ঠিক।’ তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, ‘আগে খাদ্য সচিবকে সরানো হয়েছে, এখন সরানো হল স্বাস্থ্য সচিবকে। এবার কি মুখ্যসচিবকে সরানো হবে?’